বিদেশে গোপন বিনিয়োগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের পরিচয় উন্মোচন ও বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস করা প্যান্ডোরা পেপারস খ্যাত নথিতে নাম এসেছে আরও তিন বাংলাদেশির। যাদের মধ্যে রয়েছেন একজন নারী। গত ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো ছয় বাংলাদেশির নাম প্রকাশের পর এই তিন জনের নাম এলো।
মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস—আইসিআইজে। মূলত বিদেশে গোপন সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের পরিচয় উন্মোচন করতেই আইসিআইজে ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ প্রতিষ্ঠা করেছে।
নতুন তালিকায় আসা বাংলাদেশিরা হলেন- রাজধানীর বারিধারার ডিওএইচএসের এস হেদায়েত উল্লাহ, এস রুমি সফিউল্লাহ এবং সিলেটের শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেনের বাসিন্দা শাহিদা বেগম শান্তি। এর মধ্যে হেদায়েত ও সফিউল্লাহ এক পরিবারের সদস্য।
আইসিআইজের তথ্য বলছে, এক পরিবারের সদস্য এস হেদায়েত উল্লাহ ও এস রুমি সফিউল্লাহ হংকংয়ের ট্রান্সগ্লোবাল কনসাল্টিং (এইচকে) লিমিটেড নামক একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। প্যান্ডোরা পেপার্সে তাদের বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা নগরীর বারিধারা ডিওএইচএস এর নর্দার্ন রোডের বাড়ি নং ১০৫, ৩/এফ। আর শাহিদা বেগম শান্তির ঠিকানা সিলেটের শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেন টাওয়ারের জি ব্লকের সপ্তম তলার ৩০৭৭ নং অ্যাপার্টমেন্ট।
শাহিদা বেগম শান্তির জাস লিমিটেড নামক এক অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে।
আইসিআইজের তথ্য অনুযায়ী, এস রুমি সাইফুল্লাহ ভিনসেন্ট নামের একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন জুনিয়র চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের (জেসিআই বাংলাদেশ) সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া সুইজারল্যান্ডকেন্দ্রিক এমজিআই মিডিয়া এজির আঞ্চলিক পরামর্শক এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট কনসার্নের পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
নতুন তালিকায় পাঁচটি নামের উল্লেখ থাকলেও ব্যক্তির অস্তিত্ব তিনটি। নামগুলো হলো এস হেদায়েত উল্লাহ, এস রুমি সফিউল্লাহ, সাইফুল্লাহ এস রুমি, উল্লাহ এস হেদায়েত, শাহিদা বেগম শান্তি। এর মধ্যে এস রুমি সফিউল্লাহ ও সাইফুল্লাহ এস রুমি মূলত এক ব্যক্তি। একইভাবে এস হেদায়েত উল্লাহ ও উল্লাহ এস হেদায়েতও অস্তিত্বের দিক থেকে বকেজন।
‘কর স্বর্গ’ খ্যাত অফশোর কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে গোপন বিনিয়োগ করেছেন আইসিআইজে তার তথ্য প্রকাশ করছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক কোটিপতির গোপন বিনিয়োগ বা অর্থ পাচারের তথ্য ফাঁস করে বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল প্যান্ডোরা পেপার্স।
আইসিআইজের প্রথম প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের নাম না আসলেও গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করা নথিতে ছয় বাংলাদেশি নাম এসেছিল। ওই নতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই বিদেশির নামও ছিল।
এদের অন্যতম হলেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমবি ফার্মার পরিচালক শাকিনা মিরালি, তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান মানজারুল ইসলাম।
বাকি দুইজনের একজন হলেন মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতা ও মাসাফি গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল হুদা চৌধুরী শাতিলের ভাই ও প্রাইম নিউজ বিডি ডটকম নামক একটি অনলাইন পোর্টালের প্রধান সম্পাদক সায়েদুল হুদা চৌধুরী। অপরজন হলেন অ্যানটেরিস হোল্ডিংস নামক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীদের একজন অনিতা রানি ভৌমিক।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।